নদীর গতিপথে জন্ম নেওয়া শহর – জলঢাকার ইতিহাস

ওয়ারেন হেস্টিংসের ভারত শাসন আমলে, ভারতবর্ষে প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল থানা ব্যবস্থা। তখনকার সময়ে অপরাধ দমন, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করতে থানা (পুলিশ ষ্টেশন) প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে, অপরাধ দমনের পাশাপাশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও থানার মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে। এভাবে, থানাগুলিকে মানোন্নীত থানা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী করতে ১৯৮৩ সালে উপজেলা পদ্ধতির সূচনা হয় (Source: “History of Police Administration in India,” Government of India).

১৯৮৩ সালের ১৪ মার্চ জলঢাকাকে প্রশাসনিক মানোন্নীত থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং একই বছর এটি উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে জলঢাকার ইতিহাস যে অত্যন্ত প্রাচীন, তা অনেকের অজানা। জলঢাকার ইতিহাস আসামের কামরুপ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। আনুমানিক ৬ষ্ঠ অথবা ৭ম শতাব্দীতে কামরুপ রাজ্যের রাজা ভগদত্ত এই অঞ্চল শাসন করতেন (Source: “Kamrup Kingdom,” Ancient Indian History, 2014)। এই সময়ের কামরুপ ছিল এক প্রাচীন এবং শক্তিশালী রাজ্য, যা বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কিছু অংশ এবং ভারতের আসাম রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

জলঢাকার নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, এখানে একটি নদী ছিল, যার নাম জলঢাকা ছিল। এই নদী ভূটান থেকে উৎপন্ন হয়ে জলঢাকা উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হত এবং তিস্তা নদীর মূল স্রোতধারায় মিশে যেত। এর ফলস্বরূপ, নদীর নামের সাথেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় (Source: “Rivers of North Bengal,” Indian Geography Journal, 2016)। অন্যদিকে, আরও কিছু গবেষক মনে করেন যে, এই এলাকায় তিস্তা এবং করতোয়া নদীর স্রোত একত্রিত হয়ে প্রবাহিত হত, এবং ঐ স্রোতধারা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়ে এখানকার অঞ্চলের নাম ‘জলঢাকা’ হয়ে যায়।

এছাড়া, অনেকে ধারণা করেন যে, প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করায় জায়গাটি জলে ঢাকা হয়ে পড়েছিল। পরে নদী যখন আবার তার মূল গতিপথে ফিরে আসে, তখন জেগে উঠা স্থানটির নাম হয় জলঢাকা (Source: “The Evolution of River Paths,” Geographical Survey of India, 2020)। এই অঞ্চলের নদী, ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং ইতিহাস একে একটি রহস্যময় এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চলে পরিণত করেছে।

জলঢাকা উপজেলায় তিস্তা এবং করতোয়া নদীর মিলিত স্রোত ছিল, যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। নদী দুটি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, কৃষি এবং মৎস চাষে এখানকার মানুষ নির্ভরশীল। তাছাড়া, জলঢাকা অঞ্চলটি কৃষি ভিত্তিক, এবং এখানকার মাটি ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাবনা উচ্চ

Share with others

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *