রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা লুট করেছিলেন বাংলার প্রথম কমার্শিয়াল ব্যাংক

দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট বাঙালি ব্যবসায়ী, জমিদার এবং সমাজ সংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু তাঁর জীবন কেবল সাহিত্যের পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁকে ঘিরে আছে বিতর্ক এবং বিতর্কিত ঘটনা, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো ১৮২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাংকের লুট। আজ আমরা এই ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করব।

১৮২৯ সালে ১৬ লক্ষ টাকা মূলধন নিয়ে দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়িক লেনদেন সহজ করা এবং ঋণ প্রদান। ব্যাংকের প্রধান কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দ্বারকানাথ তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রমানাথ ঠাকুরকে নিয়োগ দেন, যার ফলে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের সবকিছুই তাঁর হাতে চলে আসে।

প্রথম দিকে ব্যাংকের মূলধন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এবং তিন বছরের মধ্যে তা ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ব্যাংকের আড়ালে ঘটে যাচ্ছিল এক গভীর লুটপাট। তখনকার বৈধ হুন্ডির মাধ্যমে এই লুটপাট চালাতেন খোদ দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং নীলকররা।

দ্বারকানাথ ঠাকুরের কোম্পানি থেকে নেওয়া ঋণ এবং অন্য ব্যবসায়িক দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটি ১৮৪৩ সালে বড় ধরনের খেলাপি ঋণে পড়ে, যার মধ্যে শুধুমাত্র দ্বারকানাথের নিজের ঋণ ছিল ১৮ লক্ষ টাকা। ব্যাংকের মোট ৭৩ লক্ষ টাকার খেলাপি ঋণ জমা হয়, যা ব্যাংককে আর্থিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়।

দ্বারকানাথ ঠাকুরের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং ব্যাংকের অডিটে অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তিনি হিসাবের খাতায় কারচুপি করেন এবং ব্যাংকের ক্ষতি কমাতে বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালান। ব্যাংকের হিসাবরক্ষক এ এইচ সিমকে ১২ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে বহিষ্কার করা হলেও, দ্বারকানাথ ঠাকুর সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সেই ১২ লক্ষ টাকা শোধ করেন, কিন্তু ততদিনে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে যায়।

লুটপাটের শেষ পর্যায়ে এসে, ১৮৪৬ সালে, দ্বারকানাথ তাঁর নিজের ৭০০ শেয়ারের মধ্যে ৬৫০ শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। ফলস্বরূপ, ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বাংলার প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংকটির পতন ঘটে।

১৮৪৬ সালের ১ কোটি টাকা আজকের দিনে কত হতে পারে, তা কল্পনা করলে এই বিপুল অর্থের লুটপাটের পরিমাণ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগর মশাইয়ের পিতার মাসিক ২ টাকার আয় কিংবা ১ মন বালাম চালের দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা তখনকার অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

Share with others

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *