বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল একটি ভয়াবহ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সাভারে অবস্থিত রানা প্লাজা ধসে প্রায় ১১৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং কয়েক হাজার শ্রমিক গুরুতর আহত হন। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে নিয়ে সেই সময়ে এবং এখনও ব্যাপক সমালোচনা চলে আসছে, মূলত রানা প্লাজার এই দুর্ঘটনা ছিল তার অবহেলা ও লোভের ফল।
প্রেক্ষাপট এবং তার উত্থান
সোহেল রানা ছিলেন একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ী। সাভারে তার প্রভাব ছিল বেশ শক্তিশালী। মূলত রাজনীতি ও সম্পদের মিশ্রণেই তিনি দ্রুতই বিত্তশালী হন এবং কয়েকটি বড় বড় ভবন নির্মাণ করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রানা প্লাজা। এই ভবনটির ভেতরে ছিল কয়েকটি পোশাক কারখানা যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করতেন।
রানা প্লাজার ধস
২০১৩ সালের ২৩শে এপ্রিল, ভবনটির দেয়ালে ফাটল দেখা যায়। শ্রমিকেরা আতঙ্কিত হয়ে কাজ বন্ধ করতে চাইলেও মালিকপক্ষ জোর করে তাদের কাজে ফেরত পাঠায়। পরদিন সকালেই ভবনটি ধসে পড়ে, যার ফলে বহু শ্রমিক আটকা পড়েন ধ্বংসস্তূপের নিচে। এরকম একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সেটা জেনেও সোহেল রানা কেন এমন ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ।
সোহেল রানার বিচার এবং কারাদণ্ড
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরপরই সোহেল রানা পালিয়ে যান। তবে পুলিশ পরে তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে অবহেলা, হত্যা, এবং অন্যান্য আইনি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালে আদালত তাকে কারাদণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে এই বিচার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরগতির এবং এখনো ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ
রানা প্লাজা ধস বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়। অনেক বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডই তাদের পোশাক বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে, কিন্তু এই ঘটনা তাদেরকে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেমন অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের মতো নিরাপত্তা উদ্যোগ।