পুলিশি রিমান্ডে কি আসলেই ডিম থেরাপি দাওয়া হয়?

বাংলাদেশে জনমনে রিমান্ডের সাথে শারীরিক নির্যাতনের একটা অবশ্যাম্ভী সম্পর্ক রয়েছে। খবরের কাগজে এ বিষয়ে প্রতিদিন কোন না কোন সংবাদ পত্রের প্রতিবেদন চোখে পড়ে । সেসব প্রতিবেদনে বর্ননা করা হয় কিভাবে রিমান্ডের সময় আটককৃত ব্যক্তির উপর নানাবিধ বিচিত্র উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রিমান্ডে নেয়া আসামিদের ১৪ ধরনের নির্যাতন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে গিটা নির্যাতন, বাদুড় ধোলাই নির্যাতন, ওয়াটার থেরাপি নির্যাতন, উলঙ্গ করে নির্যাতন, সারা দিন না খাইয়ে নির্যাতন, বোতল থেরাপি নির্যাতন, ডিম থেরাপি নির্যাতন, ডিস্কো ড্যান্স নির্যাতন, সিলাই নির্যাতন, ঝালমুড়ি নির্যাতন, টানা নির্যাতন, বাতাস নির্যাতন অন্যতম।

বলা হয়ে থাকে ডিম থেরাপিতে প্রচণ্ড গরম বা ঠাণ্ডা ডিম আসামিদের মলদ্বারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । এ রকম নির্যাতনের ফলে আসামির মলদ্বার ফুলে যায় এবং অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। যতক্ষণ আসামিরা স্বীকারোক্তি না দেয় ততক্ষণ মলদ্বারে ডিম ঢুকাতে থাকে।

তবে অনেকেই মনে করেন এটা একটা কাল্পনিক ব্যাপার যার কোন ভিত্তি নেই।
সাধারণত ডিম থেরাপি বলতে মলদ্বার দ্বারা গরম ডিম ঢুকিয়ে দেয়া হয় বলে সমাজে প্রচলিত আছে। সেদ্ধ বা কাচা যে ডিমই হোক মলদ্বারে ঢুকাতে গেলে তা ভেঙে যাবার কথা। কাজেই ডিম থেরাপি বলতে বাস্তবে কিছুই নাই।

বাস্তবিক অর্থে রিমান্ড মূলত অনেকগুলো পদ্ধতির সমন্বিত রূপ যার নাম সম্মোহন পদ্ধতি। সচারাচর এক থেকে পাঁচ দিন কখনো কখনো পনের দিনের মত এ’পদ্ধতিতে সাবজেক্ট নিজের অজান্তেই গল্পটা বলতে থাকে।

আইন: আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হলো কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্ছনারকর দন্ড দেয়া যাবে না কিংবা কারো সঙ্গে কোনোরুপ নির্দয় আচরণ করা যাবে না। একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনগ্রন্থ সে দেশের সংবিধান। পাঠকের কাছে প্রশ্ন, সে সংবিধান লংঘন করে পুলিশ কি কাউকে মারধর করার অধিকার রাখে? মনে রাখা দরকার, কোনো ব্যক্তিকে থানা হেফাজতে

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদকালে তদন্ত বা রিমান্ডের নামে পুলিশের মারধর করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অর্থাৎ পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে কাউকে অযথা মারধর করতে পারে না। তবে কিছু কিছু বিষয় ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন-

১. কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বাঁধার সম্মুখীন হলে বা আসামি পলায়ন করলে, আসামিকে ধরা বা পলায়ন রোধের জন্য যতোটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন, ঠিক ততোটুকু বল প্রয়োগ করতে পারে।

২. দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক আক্রমণের শিকার হলেও পুলিশ বল প্রয়োগ করতে পারে।

৩. শান্তি-শৃঙ্খলা রার্থে পুলিশ কোনো বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্যও বল প্রয়োগ করতে পারে। তবে স্বেচ্ছায় কোনো আত্মসমর্পণকারী বা শান্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ বল প্রয়োগ করতে পারে না।

Share with others

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *