ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম টিপরা) জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ বছরের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
এ এলাকা প্রাচীন বাংলার সমতট নামক জনপদের অংশ ছিল।মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্গত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ ভূমিকর সংগ্রহ ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার প্রস্তুত করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার তৈরি হয়। রাজনৈতিক কারণে সরাইল পরগনা কখনো কোনো সময়েই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে। বাংলার বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া মসনদ-এ আলা ঈসা খাঁর বংশ ইন্ট্রোডিউস হতে জানা যায় ইন্ডিয়ার বাইশওয়ারা রাজ্যের এক যুবরাজ কালিদাস গজদানী সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুলউলামা (রাঃ) এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম ধারণ করেন। সোলায়মান খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গে আগমন করেন। উনি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের পর থেকে সর্বপ্রথম সরাইল পরগনার জায়গীর প্রাপ্ত হন। সোলায়মান খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠান বাহিনী ভিত্তিহীন সন্ধির প্রস্তাবে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময়ে ঈসা খাঁর বয়স ছিল দশ বছর। পরবর্তীতে স্বীয় প্রতিভা বলে উনি ভাটীরাজ্যের এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। ভাটী রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খাঁর সাথে মোঘল বাহিনীর সংঘাত ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈসা খাঁ সে টাইমে সরাইলে টেম্পোরারি রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ভাটীরাজ্যের একচ্ছত্র দেবতা রূপে তাঁর শাসনকেন্দ্র সরাইল হতে রসানার গাঁয়ে তার সাথে সাময়িক ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের জঙ্গল বাড়িতে স্থানান্তর করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্ধেকের বেশি এরিয়া ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ থেকে ত্রিপুরা জেলার নিকট হস্তান্তর করা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। ১৯৪৭ পরের সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব পাকিস্তান ভাগের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা টাউন নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।
ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছোট শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে। এ জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দীপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, কমফোর্ট ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে চাষি আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন লড়াইয়ে শহীদ হন।
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ ম্যানেজার মি হ্যালিডের কুঠি সরাইল থেকে শহরের মৌড়াইলে স্থানান্তরিত হয়। সম্প্রতি এটি ভেঙ্গে রাষ্ট্রীয় দফতর ঘর করা হয়েছে। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের টাইমে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে। শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র আনন্দবাজার ও টানবাজার। আনন্দবাজার, টানবাজার, জগৎবাজার, মহাদেব পট্টি, কালাইশ্রী পাড়া, মধ্যপাড়া, কাজীপাড়া ও কান্দিপাড়া শহরের পুরাতন এলাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নগর শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী জানানো হয়। ১৮৬৯ সালে শহরটি সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এ শহরের উত্থান।
তথ্যগত কোনো ভুল বা অভিযোগ জানাতে মেইল করুন thereversetimer@gmail.com
#naming#history#Bangladesh#bangla#thereversetimes #brahmanbaria
