আধুনিক কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগের আয়ত্ত একটি জেলা। প্রাচীনকালে এটা সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটা ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। এ অঞ্চলে স্বীকৃত প্রাচীন নিদর্শনাদি থেকে যতদূর জানা যায় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা অদৃশ্য সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে ৮ম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ এরিয়ায় বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। ৯ম শতাব্দীতে কুমিল্লা হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রত্নপ্রমাণ থেকে পাওয়া যায় যে, দশম থেকে ১১শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল শশী রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।
মাঝামাঝি সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পরে ১৭৬৫ সালে এটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসে। ভূমিকর আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ প্রদেশে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন কুমিল্লা ঢাকনা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লাকে কালেক্টরের আয়ত্ত করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের সাহায্যে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের গমন চালু হয়। ১৭৯৩ সালে তৃতীয় রেগুলেশন অনুযায়ী ত্রিপুরা জেলার জন্য একজন দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয় তার সাথে সে বছরই তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৮৩৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের পদগুলিকে পৃথক করা হয়। ১৮৫৯ সালে আবার এই দুইটা পদকে একত্রিত করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা তার সাথে তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ হয় ডেপুটি কমিশনার। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু’টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।
কুমিল্লা জেলা, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত। এটির একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা শতাব্দীর আগের। প্রাচীনকালে এলাকাটি ঐতিহাসিকভাবে “সমতট” নামে পরিচিত ছিল। এখানে কুমিল্লা জেলার নামকরণের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল:
প্রাচীনকাল: বর্তমানে যে অঞ্চল কুমিল্লা, তা প্রাচীনকালে ‘সমতট’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এবং এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ছিল। মৌর্য ও গুপ্ত যুগে এটি বিভিন্ন আঞ্চলিক সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
মধ্যযুগ: মধ্যযুগীয় সময়ে এই অঞ্চলটি বিভিন্ন মুসলিম রাজবংশের শাসনাধীনে আসে। এই সময়ে এটি “কমলা”, “কমলাপুরা,” এবং “কামরূপ” সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। অঞ্চলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে অব্যাহত ছিল এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময় ছিল।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সময়কাল: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়, জেলা প্রশাসনিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েছিল। 1790 সালে, ব্রিটিশ প্রশাসকদের দ্বারা এটি আনুষ্ঠানিকভাবে “কুমিল্লা” নামকরণ করে। “কুমিল্লা” নামটি বাংলা শব্দ “কুমিল্লা” থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়, যার অর্থ “দুর্গ” বা “সুরক্ষিত শহর”। এই নামটি সম্ভবত ঐ এলাকায় বিদ্যমান ঐতিহাসিক দুর্গগুলিকে বোঝায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়কাল: 1947 সালে ভারত বিভাগের পর, কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে 1971 সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ হয়ে ওঠে। জেলাটি কুমিল্লা জেলা হিসাবে তার নাম ধরে রাখে।
তার ইতিহাস জুড়ে, কুমিল্লা সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্র ছিল। এটি এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং উন্নয়ন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জেলাটি তার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং বাংলাদেশী সমাজের বিভিন্ন দিকের অবদানের জন্য পরিচিত।
তথ্যগত কোনো ভুল বা অভিযোগ জানাতে মেইল করুন thereversetimer@gmail.com