ইমাম আসমায়ী রহ.-এর “সওতু সফীরিল বুলবুলি” কবিতার পেছনের গল্প

আব্বাসীয় শাসনের এই বিখ্যাত খলিফা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান। তাঁর অসাধারণ স্মরণশক্তির কারণে, তিনি কোনো কবিতা একবার শোনাতেই তা মুখস্থ করে ফেলতেন। তাঁর দরবারে এমনকি একজন গোলাম দুইবার, একজন দাসী তিনবার শোনাতেই কবিতাটি মনে রেখে যেতেন।

যদি কোনো কবি নতুন কোনো কবিতা নিয়ে আসতো, খলিফা বলতেন,
“আমি আগেও শুনেছি, তাই তোমাকে পুরস্কার দেওয়া হবে না।”
এইভাবে, খলিফা ও তাঁর কর্মচারীরা কবিতাটি দ্রুত মুখস্থ করে ফেলতেন, যার ফলে কবিদের নতুনত্ব ও সৃষ্টিশীলতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়তো না।

একদিন খলিফা ঘোষণা করলেন,
“যে কবি এমন একটি কবিতা উপস্থাপন করবে, যা আমি আগে কখনো শুনিনি (অর্থাৎ, মুখস্থ করতে পারবো না), তাঁর কবিতাটি যে পাত্রে লেখা থাকবে, তার ওজনের সমতুল্য স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করা হবে।”

ইমাম আসমায়ী রহ. এই সুযোগকে উপলব্ধি করে একটি দুর্বোধ্য কবিতা রচনা করলেন।
কবিতার শিরোনাম ছিল “সওতু সফীরিল বুলবুলি” এবং এর অন্যতম অংশ হলো—
“তব তবি তব তব, তব তবা লী”

এই কবিতার ভাষা ও ছন্দ এত জটিল ও দুর্বোধ্য ছিল যে, খলিফা ও তাঁর কর্মচারীরা তা মুখস্থ করতে ব্যর্থ হলেন।

ইমাম আসমায়ী রহ. সঙ্গে বেদুইন সমাগম করে খলিফার দরবারে হাজির হলেন এবং এই কঠিন কবিতা আবৃত্তি করলেন।
খলিফা, যিনি সাধারণত কবিতাগুলো একবার শুনে মুখস্থ করে ফেলতেন, এইবার কবিতাটি শুনে হতভম্ব হলেন।

খলিফা তখন বললেন,
“তোমার কবিতাটি যে পাত্রে লেখা, তার ওজন অনুসারে আমি তোমাকে পুরস্কার দেব।”
ইমাম আসমায়ী রহ. হাস্যরস করে উত্তর দিলেন,
“আমি কাগজে নয়, বিশাল একটি পাথরে খোদাই করে লিখেছি, যা দশজন সৈন্য বহন করে এনেছে।”
এতে খলিফার কাছে আর কোনো বিকল্প রইল না—তিনি যথাযথ ওজনের স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করলেন।

ঘটনার পর একজন মন্ত্রী বলেন,
“এই কবি নিশ্চয়ই ইমাম আসমায়ী রহ.!”
খলিফা তখন প্রশ্ন করলেন,
“তুমি কি সত্যিই ইমাম আসমায়ী? তুমি তো আমাকে ধোঁকা দিয়েছো! আমার স্বর্ণ ফেরত দাও।”
ইমাম আসমায়ী রহ. শান্তভাবে বললেন,
“আমি স্বর্ণ ফেরত দেব, যদি আপনি একটি শর্ত মেনে নেন—ভবিষ্যতে আপনার দরবারে আসা প্রতিটি কবিকে তাদের যথাযথ পুরস্কার প্রদান করবেন।”

পরবর্তীতে খলিফা রাজি হলেন এবং সেই দিন থেকে কবিদের সৃষ্টিশীলতা ও প্রেরণাকে যথাযথ সম্মান ও পুরস্কার প্রদান শুরু করেন।

এই গল্পটি কেবল একটি রূপকথা বা ঐতিহ্যবাহী আখ্যান হিসেবে প্রচলিত হলেও, এটি ইমাম আসমায়ী রহ.-এর বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া ও কবিদের সৃষ্টিশীলতা, মানবিক আবেগ ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।

Share with others

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *