“রেড মওলানা” বাংলার অবিসংবাদিত এক নেতা

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ তৃণমূল রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে “মজলুম জননেতা” হিসাবে বেশি জানে,বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে তার অনুসারীরা তাকে অনেক সময় “রেড মওলানা” বলে ডাকতো। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টি এবং কৃষকদের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে।

প্রারম্ভিক জীবন (১৮৮০-১৯২৯)

মওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ই ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জের সয়াধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী শারাফত আলী এবং মাতার নাম বেগম শারাফত। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তিনি কঠিন শৈশব পার করেন। শিশু অবস্থায় তিনি তার চাচার আশ্রয়ে ছিলেন। ১৮৯৩ সালে তিনি পাঁচবিবির জমিদার শামসুদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে যান এবং শিক্ষকের কাজ করেন। ১৯০৭ সালে ইসলামী শিক্ষার জন্য তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসায় যোগ দেন। ১৯১৭ সালে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু (১৯৩০-১৯৫৯)

১৯৩০-এর দশকে মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৩১ সালে তিনি সন্তোষের কাগমারীতে কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৪০ সালে তিনি শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সাথে লাহোরে মুসলিম লীগের সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে বাঙাল খেদাও আন্দোলনের সময় তাদের রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেন।

১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের সৃষ্টির পর, ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন, যার সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনেও ভূমিকা রাখেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলন (১৯৬০-১৯৭৬)

১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরোধিতা করে মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য দাবি তোলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতার পক্ষে কথা বলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।

মৃত্যু

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরও তার আদর্শ এবং নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি সমাজের শোষিত মানুষের পক্ষে ছিলেন এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।

Share with others

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *